ঙ্গাসাগর মেলা গঙ্গাসাগরের ইতিহাস এ বিষয়ে শাস্ত্র অনুসারে জেনে নেবো ব্রহ্মপুরাণ, বিষ্ণুপুরাণ এবং অমল পুরান, শ্রীমৎ ভাগবত আদি শাস্ত্র গ্রন্থতে এই গঙ্গার মাহাত্ম্য এবং গঙ্গা কিভাবে সাগরেতে মিলিত হয়েছেন গঙ্গাসাগর উৎপত্তি বিষয়ে বর্ণিত হয়েছে। তো বহু পূর্বে কোটি কোটি বছর পূর্বে সূর্য বংশের একজন মহান রাজা ছিলেন তার নাম সাগর। তার দুই পেত্নী এক পত্নীর থেকে 60,000 পুত্র, আরেকজন পত্নীর একটি মাত্র পুত্র যার নাম অসামঞ্জস্য। অসামঞ্জস্য  র্অথাৎ  কার্যকলাপ সামঞ্জস্য নয়। মহারাজ সগর তিনি স্বাসাগর পৃথিবীর অধীশ্বর ছিলেন। তিনি একে একে নিরানব্বইটি অশ্বমের যজ্ঞ করেন।


কিন্তু যখন 100 যোগ্য করতে যাবেন, তখন দেবরাজ ইন্দ্র তাতে ঈর্ষান্বিত হয়ে বাধা প্রদান করেন। কারণ শাস্ত্র অনুসারে কেউ যদি শত অশ্বমের যজ্ঞ সম্পাদন করেন, তাহলে তিনি ইন্দ্র পদ লাভ করেন। তাই যখন মহারাজ সগর শত অশ্বমেধ যজ্ঞ সম্পাদন করবার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তখন দেবরাজ ইন্দ্র ভাবলেন যে ইনি ইন্দ্রপদ দখল করবার জন্য শত অশ্বমেধ যজ্ঞ করছেন। তাই দেবরাজ ইন্দ্র এই অশ্বমের যজ্ঞের যে মন্ত্রপূতঃ অশ্ব তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল,ভ্রমণ করবার জন্য ইন্দ্র সেটি নিয়ে কপিল মুনির আশ্রম এ রাখেন।

 

কপিল মুনির আশ্রম সাগরদ্বীপে রয়েছে কপিলমুনি সম্বন্ধে মত ভাগ্যবান যে আমরা জানতে পারি যে তিনি হচ্ছেন দেবধি নন্দন, মহর্ষি কর্দন এবং মহারাজ মনুর পুত্রি বিভূতির পুত্র কপিল দেব তিনি ভগবান তিনি বিভিন্ন স্থান ভ্রমণ করতে করতে অবশেষে এই সাগরদ্বীপে সাগরের তীরে তার আশ্রম স্থাপন করেন। দেবরাজ ইন্দ্র তারে এই সগর মহারাজের অশ্বকে এই কপিলমুনির আশ্রম এ রেখে দিয়ে চলে যান। এদিকে মহারাজ সগর যখন জানতে পারলেন যে যজ্ঞের অশ্ব পাওয়া যাচ্ছে না। তাই তিনি বিভিন্ন দুদ্বের পাঠালেন কিন্তু অশ্ব খুঁজে পাওয়া গেল না। তখন তার 60000 পুত্র প্রেরণ করলেন। যজ্ঞের অশ্বকে খোঁজার জন্য তারা বিভিন্ন স্থান অন্বেষণ করতে করতে অবশেষে এসে পৌঁছালেন এই সাগরদ্বীপ কপিল মুনির আশ্রমে। আশ্রমে এসে তারা দেখলেন, যে যজ্ঞের অশ্ব এখানে রয়েছে তাই তারা ভাবলেন যে এই সাধু এই যে মহর্ষি ইনি আমাদের অশ্বকে চুরি করে এনেছেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মহর্ষি কপিলমনি তিনি কিছুই জানতেন না ভগবান কপিল মুনি কিছুই জানতেন না।এরা ভাবছেন ইনি চুরি করেছেন তাই তারা বিভিন্ন প্রকার মিথ্যা অভিযোগ করতে লাগলো এবং কটু-কটু ভাষায় তাকে গালি দিতে থাকলো। তার ফলে ভগবান কপিল দেব তিনি রোষানল প্রয়োগকে 60000 পুত্রকে  ধ্বংস করে দিলেন অর্থাৎ ভষ্মিভূত করে দিলেন।


মূলকথা তারা ভষ্মিভূত হয়ে গেছেন এদিকে মহাদেশ সাগর যখন জানতে পারলেন তাঁর 60000 পুত্র ভস্মীভূত হয়ে গেছে তখন তিনি অত্যন্ত ব্যথিত হলেন এবং তার পুত্র অসামঞ্জস্য এবং অসামঞ্জস্যের পুত্র অংশুমান কে পাঠালেন। অংশুমান খুঁজতে খুঁজতে এলেন এসে দেখলেন যে ভগবান কপিল দেব তিনি ধ্যানে মগ্ন রয়েছেন এবং সামনে অশ্ব বাধা রয়েছে তখন তিনি প্রশ্ন করলেন স্তুতির দ্বারা তো ভগবান তখন বললেন যে কি বর চাও বল বললেন যে আমাদের যে 60000 পিতৃব্য অর্থাৎ কাকা তারাতো মারা গেলেন, আপনি তাদের জীবন দান করুন। তা তো সম্ভব নয় তবে তার একটি  উপায় আমি তোমাকে বলছি। কেউ যদি তোমাদের মধ্যে ভগবান কে সন্তুষ্ট করে এই ধরণীতে গঙ্গা কে অবতরণ করতে পারে এবং গঙ্গাদেবীর স্পর্শে এই ভর্ষ যখন আসবে তখন এরা সকলেই মুক্ত হয়ে যাবে। এই সংবাদ নিয়ে অংশুমান গেলেন মহারাজ সগরের কাছে মহারাজ সাগর তপস্যা করলেন তাতেও কিছু হল না তারপরে অংশুমান তপস্যা করলেন তাতেও গঙ্গা দেবী কে অবতরণ করান গেলনা। অবশেষে সেই বংশের একজন মহান বৈষ্ণব রাজা ছিলেন তিনি ভগবানের অনন্য ভক্ত তিনি হলেন মহারাজ ভগিরথ।

 


তিনি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের তপস্যা করলেন গঙ্গাদেবীকে আগমধের জন্য। অবশেষে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং গঙ্গা দেবী কে নিয়ে মহারাজ ভগিরথ এর সামনে উপস্থিত হলেন। মহারাজ ভগিরথ গঙ্গা দেবী কে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রণাম করলেন এবং পুরো ঘটনা যা হয়েছে সেটি ভগবানের কাছে নিবেদন করলেন। তখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বললেন আমি সবই জানি। গঙ্গাদেবি বললেন না প্রভু আমি পৃথিবীতে অবতরণ করবো না, কেননা পৃথিবীবাসী সকলেই আমার বক্ষে পাপ ত্যাগ করবে। তা আমার কি হবে, তখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বললেন যে কোন অসুবিধা নেই। তোমার বক্ষে যারা পাপ ত্যাগ করবে সে সমস্ত পাপ সমস্ত নষ্ট হয়ে যাবে যখন আমার মহান ভক্ত তোমার বক্ষে অবগাহন করবে। তার পর মহারাজ ভগিরথ তিনি এসেছেন তাঁর পিতৃব্যদের উদ্ধার করবেন জন্য তাই তুমি যাও।

 

তখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আদেশ অনুসারে  গঙ্গাদেবী অবতরণ করলেন। মহারাজ ভগিরথ তিনি শঙ্খ বাজাতে বাজাতে গঙ্গা দেবী কে নিয়ে এলেন। গঙ্গা স্বর্গে ছিলেন তারপর তিনি মহাদেবের মস্তকে পড়লেন। মহাদেব জটার দ্বারা সেই গঙ্গা দেবী কে অবরোধ করলেন তখন ভগিরথ আবার মহাদেব স্তুতি করলেন। মহাদেব তার জটা মুক্ত করলেন গঙ্গা তখন আস্তে আস্তে তিনি এলেন মহারাজ ভগিরথ সামনে সামনে তিনি শঙ্খ বাজাচ্ছে আর ভগিরথ এর শঙ্খের ধ্বনি শুনে শুনে গঙ্গা দেবী তার পেছনে পেছনে আসছেন। এই ভাবে বিভিন্ন স্থান তিনি পবিত্র করতে করতে করতে করতে অবশেষে শ্রীধাম মায়াপুরে তিনি এসেছেন।

আরও পড়ুন: ছট পূজোর ইতিহাস কি জানেন, কেন করা হয় ছট পূজা?

যেখানে গঙ্গাদেবী কিছুকাল অবস্থান করেছিলেন। কেননা সেই সময়টা ছিল ফাগুন মাস মহা প্রভু আবির্ভাব তিথি। গঙ্গা দেবী বললেন আমি এখানে কিছু কাল থাকবো আমার প্রভুর আবির্ভাব তিথি পালন করে তারপর তোমার সঙ্গে যাবো। অবশেষে তিনি এখানে থাকলেন কিছুকাল এবং মহাপ্রভুর জন্ম দিন অর্থাৎ গৌর পূর্ণিমা ফাল্গুনী পূর্ণিমা পালন করে গঙ্গা দেবী আবার ভগিরথ এর সঙ্গে চলতে শুরু করলেন এবং চলতে চলতে চলতে অবশেষে তিনি সাগরে মিলিত হলেন। বঙ্গোপসাগরে  মিলিত হলেন। গঙ্গা সাগর অর্থাৎ সাগরের সঙ্গে গঙ্গার জলের মিলনস্থল সেটা হচ্ছে গঙ্গাসাগর।


এটি পৌষ সংক্রান্তি তিথিতে হয়েছিল এবং এই উপলক্ষে হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ তীর্থযাত্রীরা ভারতের বিভিন্ন স্থান থেকে আসেন। শুধু ভারতের বিভিন্ন স্থান নয় পৃথিবীর বিভিন্ন বিভিন্ন স্থান থেকে বিদেশি তীর্থযাত্রীরা আসেন তারা পুণ্য স্নান করতে। হিন্দু শাস্ত্র অনুসারে এই গঙ্গাসাগরের বক্ষে কেউ যদি স্নান করে তাহলে বহু পূর্ণ তারা লাভ করতে পারে। তারা অনেক অশ্বমেধ যজ্ঞের ফল লাভ করতে পারে। সহস্ত্র গাভী দানের ফল লাভ করতে পারে। বহু গুণের কথা বিভিন্ন শাস্ত্রে বর্ণিত হয়েছে।

 

গঙ্গার আর এক নাম ভগিরথ কারণ তিনি গঙ্গা কে এনেছেন। গঙ্গা দেবীর আরেক নাম ভাগরথী কেননা ভগীরথের কন্যারূপে তিনি তাকে মনে করেছেন তাই তার নাম হয়েছে ভাগীরথী। তাছাড়াও গঙ্গা আরেক নাম হচ্ছে জান্নবী কেননা তিনি যখন আসছিলেন তখন তিনি জন্নু মুনির আশ্রম কে তিনি ভাসিয়ে দিয়েছিলেন। জন্নুমুনির কন্যারুপে তিনি‌ আবির্ভূত হয়েছেন। জন্নুমনি গন্ডুসে পান করছিলেন‌ গঙ্গা কে। ভগিরথ আবার স্তুতি করলেন তাকে প্রশন্ন করলেন জন্নু মুনি তখন তার কোন কোন পুরাণে আছে কান দিয়ে তিনি গঙ্গাকে প্রকট করেছেন, কোন কোন জায়গায় আছে তার উরু থেকে তিনি পকট করেছেন। যাইহোক গঙ্গা জন্নুমুনির থেকে মুক্তি পেলেন তাই তিনি তাকে পিতা রুপে গ্রহন করেন। গঙ্গা যখন এলো যখন‌ গঙ্গার পবিত্র জল সগর মহারাজের 60,000 ভষ্মিভূত ছেলের ভর্ষে লাগলো তাদের প্রানের মুক্তি হলো‌ এবং তারা স্বর্গ লাভ করলেন।


আরও পড়ুন: কেউ যদি বলে বাঙালি ভীতু হয়, তাহলে এই গল্পটি শুনিয়ে দেবেন তাকে ! এক বেঙ্গল টাইগারের গল্প


 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন